শনিবার | ২৭ জুলাই ২০২৪
Cambrian

অধ্যক্ষকে যে কারণে যেভাবে হত্যা, যা বললো র‌্যাব

spot_img
spot_img
spot_img

নিজস্ব প্রতিবেদক

র‌্যাবের অভিযানে নিখোঁজ সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন হত্যাকান্ডের মূল হত্যাকারীসহ ৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের দেখানো মতে অধ্যক্ষের মাথাসহ ৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মরদেহ উদ্ধারের পর আজ বিকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানায়, গত ১৩ জুলাই সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, আশুলিয়া এর অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন (৩৬) নিখোঁজ হন। তিনি লালমনিরহাটের হাতীবান্দা থানার শরত বর্মনের ছেলে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ভিকটিমের ভাই দীপক চন্দ্র বর্মন গত ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নম্বর-২১৩১। বিষয়টি মিডিয়াতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ৮ আগস্ট মধ্যরাত থেকে আজ সেমাবার সকাল পর্যন্ত র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-৪ এবং র‌্যাব-১৩ এর অভিযানিক দল হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্টতায় মোঃ রবিউল ইসলাম (৩০), মোঃ আবু মোতালেব (৩০) ও মোঃ আঃ রহিম বাদশাকে (২২) গাইবান্ধা, আব্দুল্লাহপুর ও আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে।

অধ্যক্ষ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিন জন

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে র‌্যাবকে তথ্য দেয়। পরে তাদের নিয়ে সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ ও তৎসংলগ্ন এলাকা এবং আশকোনায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এলাকা হতে ভিকটিমের দেহের ৫টি খন্ডিত অংশ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার শাবল ও জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডটি সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড। গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলাম এবং আবু মোতালেব একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং ভিকটিম উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি যৌথ মালিকানা যথাক্রমে- গ্রেফতারকৃত মোঃ রবিউল ইসলাম, গ্রেফতারকৃত মোঃ আবু মোতালেব ও ভিকটিমসহ ৪ জন দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছিলো।
গ্রেফতারকৃতরা জানায়, কলেজ পরিচালনার লভ্যাংশ বন্টন, প্রাইভেট পড়ানোকে কেন্দ্র করে পেশাগত ঈর্ষা পরায়ণ হয়ে হত্যাকান্ডটি সংগঠিত করে।
গত ৭ জুলাই গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলাম, তার ভাগ্নে গ্রেফতারকৃত মোঃ আঃ রহিম বাদশা ও গ্রেফতারকৃত মোঃ আবু মোতালেব মিলে হত্যাকান্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে।
এ লক্ষে গ্রেফতারকৃত মোঃ রবিউল ইসলাম হত্যাকান্ডের জন্য ব্যবহৃত দা, হাতুড়ি, শাবল স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকা হতে ক্রয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিঁড়ির নিচে গোপনে রেখে দেয়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত মোঃ রবিউল ইসলাম স্কুলে প্রবেশের জন্য কৌশলে একটি ডুপ্লিকেট চাবি তৈরী করে। গত ১৩ জুলাই আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোররাত সাড়ে ৪টার শধ্যে গ্রেফতারকৃত রবিউল ও রহিম সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ভিকটিমকে হত্যা করে ভিকটিমের দেহকে ৬টি অংশে বিভক্ত করে।

খন্ডিত লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে র‌্যাবের ব্রিফিং

গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে গ্রেফতারকৃত রবিউল ও তার ভাগ্নে রহিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে আসে। অতঃপর তারা সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। উক্ত প্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতিদিনই রাতে অফিস খোলা হতো ও ছাত্র ছাত্রীরা প্রাইভেট পড়ার জন্য আসতো। সবাই চলে গেলে রাত ১১টার দিকে রবিউল ইসলাম অধ্যক্ষকে কৌশলে একটি শ্রেণী কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে ওৎ পেতে থাকা তার ভাগ্নে রহিম বাদশা প্রথমে অধ্যক্ষকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। অধ্যক্ষ প্রতিহত করার চেষ্টা করলে রবিউল তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে। অতঃপর রহিম বাদশা হাতুড়ি দিয়ে কয়েকটি আঘাত করলে অধ্যক্ষ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে রবিউল দা দিয়ে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে এবং উভয়ে ভিকটিমের দেহ ৬টি টুকরা করে। শরীরের অংশগুলো স্কুলের বাউন্ডারীর ভিতরে মাটি চাপা দেয়। হত্যাকারীরা তাদের ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র (দা) নিকটবর্তী একটি স্থানে বালুর নিচে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শাবল ফেলে দেয়। পরবর্তীতে জামাকাপড় ও মাথা প্যাকেট করে একটি ব্যাগে নিয়ে ঢাকার আশকোনায় একটি ডোবায় পুতে ফেলে এবং পথিমধ্যে আশকোনায় একটি রাস্তার পাশে ব্যাগ হাতুড়ি ফেলে দেয়। এছাড়া এয়ারপোর্ট রেল ষ্টেশনের নিকটবর্তী ভিকটিমের মোবাইলটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয়। এরপর তারা আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
প্রসঙ্গত, ১ আগস্ট বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে ওই নিখোঁজ অধ্যক্ষের সন্ধান দাবি করে তার ছোটভাই সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে সাহস রায়ও উপস্থিত ছিলেন। ‘আমার ভাইয়ের সন্ধান দিন, আমরা বড় অসহায়’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলনের খবর ছবিসহ ক্র্যাবনিউজবিডি ডটকম- এ প্রকাশিত হয়।

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ