নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকাই চলচিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি ও অভিনেতা ইমনের সাথে কথোপকথনের অডিও এবং তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে অশ্লিল মন্তব্য করে ‘বিশেষ আলোচনায়’ থাকা সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান পদ হারাতে বসেছেন।
প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ মুরাদকে মোবাইল ফোনে নিজে জানিয়ে দিয়েছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আগামীকালকের ( ৭ ডিসেম্বর) মধ্যে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। যা মুরাদ হাসানকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাতে তাঁর বাসভবনে ডাক্তার মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং আমি আজ ( ৬ ডিসেম্বর) রাত ৮ টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি।
বেশকিছু দিন ধরে বিভিন্ন কারণে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। কখনও বিরোধী দলের নেতাকর্মী নিয়ে আবার কখনওবা চলচ্চিত্র জগতের লোকদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। তবে এবারের তথ্যটি আরও ভয়ংকর। যে তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি অডিও ক্লিপ। যেখানে কথা বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। অপর প্রান্তে ছিলেন চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যেই ছিল ‘অশ্রাব্য’ । বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। তবে এ নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী কিংবা মাহিয়া মাহির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও বক্তব্য পায়নি গণমাধ্যমকর্মীরা ।
এর দুদিন আগেই ইউটিউবে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার পরিবারের এক নারী সদস্যকে উদ্দেশ্য করে অশালীন বক্তব্য দেন ডা. মুরাদ হাসান। প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যরস করতে করতে ওই নারীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন তিনি। মুরাদ হাসান ফোনটি করেন চিত্রনায়ক ইমনকে।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা এখন কোথায় আছে। পরে এক পর্যায়ে মুরাদ হাসান জানতে চান, তার সাথে কে কে আছে? ইমন মুরাদ হাসানকে জানান, এক পরিচালকের সঙ্গে তিনি ও মাহিয়া মাহি কথা বলছেন। পরে ফোনটি মাহিকে দেন ইমন। তখন মাহীর সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। মাহিকে সঙ্গে নিয়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ে দেখা করতে বলেন প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। চিত্রনায়ক ইমনকে তিনি বলেন ঘাড় ধরে যেন মাহিকে তার কাছে নিয়ে যান। ভাইরাল হওয়া ক্লিপটি তার বলে স্বীকার করে ইমন।
ইমন বলেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি সত্যি। তবে এটি এখনকার নয়,দুই বছর আগের। ইমন বলেন, ‘একজন মন্ত্রী যখন আমাকে কল দেন আমি তো ধরবোই তাই না? কোনো ইনটেনশন নিয়ে আমি কথা বলেনি। উনি আসলে মাহীর সঙ্গে কি কি কথা বলছেন আমি তো জানতাম না। কারণ ফোনটি লাউড স্পিকারে ছিলো না। আর মাহীও আমাকে কিছু জানায়নি। কারণ আমরা আসলে সিনেমার মহরত (সুটিং) নিয়ে কথা বলছিলাম। এখন অডিওটা শুনে আমি জানতে পারলাম সেদিন মাহি কতোটা বিব্রত ছিলো।’
ইমন বলেন, আসলে আমি তো উনার মতো লোকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারি না। তাই উনার কথা মতো আমি বাধ্য হয়ে বলেছি, ‘হ্যাঁ, ভাই আসতেছি। দেখছি ভাই।’ ইমনের দাবি, একজন তথ্য প্রতিমন্ত্রী যেকোনও শিল্পীকেই ফোন দিতেই পারেন। কিন্তু এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। তিনি নিজেও হতাশ মাহির সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর ফোনালাপ শুনে। বর্তমানে নায়িকা মাহিয়া মাহি অবস্থান করছেন সৌদি আরবে। স্বামী রাকিব সরকারের সঙ্গে তিনি ওমরাহ পালন করতে গেছেন। এ কারণে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি গণমাধ্যমকর্মীদের।
এদিকে, তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ভার্চুয়াল আলোচনায় নারী বিদ্বেষমূলক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তার ব্যক্তিগত। বিষয়টি নিয়ে আমি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করব। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা সিটির মেয়র-কাউন্সিলরদের সাথে মত বিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।