শনিবার | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Cambrian

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়ংকর কিডনিচক্র

spot_img
spot_img
spot_img

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এহেন কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে উল্লেখ করে র‌্যাব জানিয়েছে, এরকম একটি চক্রের হোতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, এই চক্রের সন্ধান পেয়ে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধ কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। সিন্ডিকেট সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করছিলো। একই সাথে অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছে। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত র‌্যাব-৫, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা যৌথ অভিযান চালিয়ে জয়পুরহাট এবং রাজধানীর নর্দা হতে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মোঃ শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬), মোঃ মেহেদী হাসান (২৪), মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৮), মোঃ আব্দুল মান্নান (৪৫) এবং মোঃ তাজুল ইসলাম ওরফে তাজুকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, তাদের চক্রে সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন এবং তারা ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধ কিডনি ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন-প্রত্যাশী বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। চক্রের ২য় দলটি প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ৩য় অন্য একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সাথে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভূয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভূক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

র‌্যাব বলছে, এই চক্রের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভূক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ/অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা এই চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের নিকট হতে ১৫ হতে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে এবং অগ্রীম ২ লাখ টাকা প্রদান করতো। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো। চক্রের মূল হোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ এবং ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করত। আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই চক্রটি কোন প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমান ভূক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকতো। চুক্তি অনুযায়ী কিছু অর্থ ও ভয় ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের চুপ রাখার চেষ্টা করা হত।

বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম আসামী শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা হতে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন। ইমরান ফেসবুক এ “বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা” এবং “কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা” নামক ২টি পেজের এডমিন এবং এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রয়ের জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছেন।

গ্রেপ্তার মোঃ আব্দুল মান্নান মূলত ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করেন এবং ইতোপূর্বেও এই অপরাধের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ৬ টির অধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার তাজুল ইসলাম কাজ করতেন মান্নানের সহযোগী হিসেবে এবং তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, মেডিকেল ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করতেন। এ কাজে তারা জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করতেন বলে স্বীকার করেন।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে র‌্যাব জানায়।

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ