নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ক্যান্সার ও করোনা মহামারিতে বহুল ব্যবহৃত দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। একইসঙ্গে এসব ওষুধ তৈরির সরঞ্জামসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছেন, নকল ওষুধ তৈরির আদ্যপান্ত। কারা জড়িত, প্ররোচনা ছিলো কাদের- এসব তথ্য দিয়েছেন তারা। যা যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ।
এছাড়া গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, একটি অসাধু চক্র নকল ওষুধ বাজারজাত করছে। খবর পেয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ডিএমপির গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগতাদের গ্রেপ্তার করে। তারা হচ্ছেন- তরিকুল ইসলাম, সৈয়দ আল মামুন, সাইদুল ইসলাম, মনোয়ার, আবদুল লতিফ, নাজমুল ঢালী ও সাগর আহমেদ মিলন।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের হেফাজত থেকে একমি কোম্পানির মোনাস-৭০০ বক্স, স্কয়ার কোম্পানির সেকলো-৫০ বক্স, জেনিথ কোম্পানির ন্যাপ্রোক্সেন প্লাস-৭৪৮ বক্সসহ অন্যান্য কোম্পানির বিপুল পরিমাণ নকল ঔষধ, ঔষধ তৈরির মেশিন, ডায়াস ও ঔষধের খালি বক্স উদ্ধার করা হয়।
গত ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ বুধবার ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর কাজলা, আরামবাগ ও মিটফোর্ড এলাকায় এই অভিযান চলে।
কারা, কিভাবে তৈরি করতো নকল ওষুধ
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত তরিকুল ইসলাম ও সৈয়দ আল মামুন কারখানা স্থাপন করে জীবন রক্ষাকারী এসব ওষুধের নকল করা শুরু করে। খোসা, লোগো, আকার-আকৃতি ঠিক রেখে ইচ্ছেমাফিক উপাদান দিয়ে তৈরি করতো সাইদুল ইসলাম । তিনি নকল ওষুধ তৈরির প্রধান কারিগর। আর মনোয়ার ‘এ্যালো এ্যালো ফয়েল (ওষুধের থাকা চকচকে কাগজ)’ ও আবদুল লতিফ ওষুধের পাতায় ছাপ দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসহ সিলিন্ডার সরবরাহ করতো।
গ্রেপ্তার নাজমুল ঢালী ওষুধের বক্সে ছাপ দেয়ার পর তৈরিকৃত এ সকল নকল ওষুধ সাগর আহমেদ মিলনের নেতৃত্বে মিটফোর্ডের কয়েকটি গ্রুপের মাধ্যমে বাজারজাত করার কাজ করেতা।
তিনি আরও বলেন, ওইসব ওষুধে মূলত প্রয়োজনীয় কোন সক্রিয় উপাদান থাকে না। নন ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রেডের এসব কেমিক্যাল সেবনের ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র এর মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। এ সকল নকল ওষুধ সাধারণ মানুষের জন্য মরণ ফাঁদ।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ব বাজারে ১৪৫ টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। ভেজাল এবং নকল ওষুধ এই সুনাম এবং আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মফস্বলের ফার্মেসিগুলোকে টার্গেট করে একটি অসাধু সংঘবদ্ধ চক্র সারাদেশে ভেজাল ও নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ ধরণের ওষুধ মাদকের চেয়েও ভয়াবহ।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে্য বলেন, যদি কেউ আমাদের নকল ওষুধ কারখানা সমন্ধে অবগত করেন, তাহলে আমরা কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে বংশাল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পরে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।