নিজস্ব প্রতিবেদক
উপজেলা চেয়ারম্যানের লালসার শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় কিশোরী রুপা আক্তার (১৫)। রুপা রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। মায়ের সঙ্গে পরকীয়া থাকাবস্থায় মেয়ের ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে পাবনার বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাবুর। এক পর্যায়ে ঘটনাটি ফাঁস হলে আত্মহননের পথ বেছে নেয় সে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানে আলোচিত ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করতে চাইলেও করতে পারেনি কিশোরীর মা। গত প্রায় দেড় মাসের অধিক সময় ধরে ওই নারী যেন মামলা করতে না পারে সেজন্য হুমকির পাশাপাশি এক প্রকার অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই নারীর অভিযোগ, বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। আমাকে মামলাও করতে দেয়া হচ্ছে না। তবে পুলিশ বলছে, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। বাদী চাইলে মামলা করতে পারেন।
ভুক্তভোগী নারী গত প্রায় ১০ বছর আগে পাবনার নগরবাড়ি এলাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দুই কন্যা সন্তান নূপুর আর রুপাকে নিয়ে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় বসবাস শুরু করেন। কখনো গার্মেন্টস আবার কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করে কিছু টাকাও জমান। আর সেই টাকা কিছু লাভ হওয়ার আশায় ওই এলাকার রুস্তম আর সোহানের হাতে তুলে দেন। পরবর্তীতে তারা দুইজনেই লাভ তো দূরের কথা আসল টাকা দিতে নানাভাবে ঘুরাতে থাকেন। উপায়হীন হয়ে ওই নারী নানা লোকের পরামর্শে টাকা উঠানোর জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাবুর শরণাপন্ন হন।
এরপরই বাবুল লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার ওপর। এরপর নানা কৌশলে তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। এক পর্যায়ে ওই নারীকে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়াও করে দেন। ফ্ল্যাট বাসা নেয়ার পর বাবু ওই বাসায় নিয়মিত আসা যাওয়া শুরু করেন। ওই নারীর সঙ্গে পরকীয়া চলা অবস্থায় তার মেয়ে রুপার ওপর নজর পড়ে। কিশোরী রুপাকে স্মার্ট ফোন কিনে দেয়া থেকে শুরু করে বাইরে বাজার করতেও নিয়ে যেত। যেহেতু মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক সেহেতু মাও চিন্তা করেনি তারই মেয়ের ওপর নজর পড়বে বাবুর। এভাবে চলতে থাকা অবস্থায় মা তার মেয়ের মোবাইলের ম্যাসেঞ্জার দেখে ফেলায় তাদেও প্রেমের বিষয়টি ধরা পড়ে। এমনকি তার মেয়ে ও বাবুর আপত্তিকর নানা ছবিও দেখে ফেলেন।
এদিকে বিষয়টি দেখে ফেলার পর থেকে মেয়েকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে। পাশাপাশি বাবুর সঙ্গেও ওই নারী বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় বাবু ওই নারীকে হুমকি দেন। সংসারে এ নিয়ে অশান্তি শুরু হলে এক পর্যায়ে মেয়ে রুপাও বুঝতে পারে বাবু তার মায়ের সঙ্গে একই কাজ করেছে। ঘটনার দিন ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে ওই নারী মেয়েকে একা রেখে অপর মেয়ে নুপুরের বাড়ি যায়। সেখান থেকে দুপুরের পর বাসায় আসার পর দেখেন মেয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে দক্ষিণখানা থানা পুলিশের একটি দল লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, পুলিশ বাসায় আসার পর তার কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনে। এরপর রুপার মোবাইল নিয়ে চলে যায়। তিনি বলেন, আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চেয়ারম্যান যা করেছে তা কখনো মেনে নেয়ার মতো না। আমি তার কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলাম। সে আমার সঙ্গে নানা কৌশল করে আমাকে দুর্বল করে দেয়। আমি টিনের বাসায় ছিলাম সে টাকা দেয়াতে ফ্ল্যাট বাসায় উঠি। কিন্তু আমার সঙ্গে এগুলো করার পর আমার মেয়েকে নিয়ে এমন খেলা খেললো। শেষ পর্যন্ত আমার মেয়েকে বাঁচতেও দিল না। পুলিশকে পুরো ঘটনা বলার পর তারা চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মামলা করতে দেয়নি। এছাড়া আমার মেয়ের মোবাইল থেকে সবকিছু ডিলিট করে দিয়ে মাসখানেক পর মোবাইলটি দিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমি ওই বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্য বাসায় উঠেছি। আমি কোথায় যাচ্ছি কি করছি সব তারা চোখে চোখে রাখছে। মামলা করলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আমি নগরবাড়ি ঘাটে গেলে কেটে ফেলবে। এ রকম নানা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি এ চেয়ারম্যানের বিচার চাই।
এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ওসি মামুনুর রহমান বলেন, প্রথমে ওই নারী মামলা করতে চাননি। ওই নারী যদি মামলা করতে চান তবে আমরা মামলা নেব।
পাবনার বেড়া উপজেলার চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাবু বলেন, ওই মহিলা ভালো না। আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে। আর ঘটনার দেড় মাস পর আপনারা কেন এ বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন। এক পর্যায়ে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।